বিএমটিটিআই প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ও সংক্ষিপ্ত ইতিহাস :
আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ভারতীয় উপমহাদেশে মাদরাসা শিক্ষার ইতিহাস অনেক পুরানো। ১৭৮০ সালে ইংরেজ শাসক কর্তৃক কলকাতা আলীয়া মাদরাসা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সূচনা হয় মাদরাসা শিক্ষা ধারার। কালের পরিক্রমায় উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের অবসান ঘটে। অদ্ভুদয় ঘটে ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটো রাষ্ট্রের। অতঃপর ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের অদ্ভুদয় ঘটে। মাদরাসা শিক্ষার ব্যবস্থা স্কুল কলেজের সমান্তরালভাবে সুযোগ সুবিধা না পেলেও সরকারি স্বীকৃতি নিয়ে এগুতে থাকে এ শিক্ষা ধারা। বিভিন্ন দাবী ও আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার ১৯৮০ সাল থেকে আলীয়া মাদরাসা শিক্ষা ধারাকে এমপিওভুক্ত করে এবং ১৯৮৫ সাল থেকে দাখিলকে এসএসসি সমমান এবং ১৯৮৭ সাল থেকে আলিমকে এইচএসসি সমমান প্রদান করে। ২০০৬ সালে ফাজিল শ্রেণিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নেয়া হয় এবং ডিগ্রি এর মান প্রদান করা হয় আর কামিলকে দেয়া হয় মাস্টার্স এর মর্যাদা। মাদরাসা শিক্ষার মার্যাদা অর্জনের বিভিন্ন দাবী ও আন্দোলনের পাশাপাশি মাদরাসা শিক্ষকদের গুণগত মান ও পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একটি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট/কলেজ প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে দীর্ঘদিন ধরে দাবী চলে আসছিল। মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশন, ড. শামসুল হক শিক্ষা কমিশন ও প্রফেসর কবির চৌধরী শিক্ষা কমিশনের প্রত্যেকটিতে মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রতি গুরুত্বারোপ করা হয়। প্রফেসর মনিরুজ্জামান মিয়া শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে ১৯৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার গজীপুরের বোর্ড বাজারে সাবেক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল ইউনিটের জন্য যে জায়গাটি বরাদ্দ ছিলো সেই জায়গাটি অধিগ্রহণ করে বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড এর ব্যবস্থাপনায় মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে “মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট শীর্ষখ প্রকল্প” এর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। প্রকল্পে ৫২ জন জনবলের অর্গানোগ্রাম তৈরি করে এর কার্যক্রম ৯ কোটি ৯৯ লক্ষ টাকায় এ প্রকল্পের কাজ জানুয়ারী-২০০১ সালে আরম্ভ হয়ে জুন-২০০১ সালে শেষ হয়। ১৯৯৯ সালে বিএমটিটিআই এ প্রকল্পের অর্থে মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য সর্বপ্রথম প্রশিক্ষণ কোর্স আরম্ভ হয় এর ৬টি প্রশিক্ষণ পরিচালিত হয়, যাতে প্রায় ২৮১ জন মাদরাসার উপাধ্যক্ষ, মুহাদ্দিস ও প্রভাষকগণ অংশগ্রহণ করেন। অতঃপর এই ইনস্টিটিউটে অক্টোবর-২০০২ সাল থেকে নিয়মিতভাবে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আরম্ভ হয়। সর্বপ্রথম দাখিল স্তরের আরবি, ইংরেজি ও গণিত বিষয়ের সহকারি শিক্ষকদের চাকুরীকালীন বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ কোর্স (চার সপ্তাহ মেয়াদী) আরম্ভ হয়। পর্যায়ক্রমে মাদরাসা প্রধান ও সহকারি প্রধানদের জন্য শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ কোর্স(তিন সপ্তাহ মেয়াদী), সিনিয়র মাদরাসার অধ্যক্ষ/উপাধ্যক্ষদের জন্য শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ কোর্স(তিন সপ্তাহ মেয়াদী), এবতেদায়ী মাদারাসা প্রধানদের জন্য “শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা প্রশিক্ষণ কোর্স”(দুই সপ্তাহ মেয়াদী), সিনিয়র মাদরাসার প্রভাষক/সহকারি অধ্যাপকদের জন্য বিষয়ভিত্তিক (আরবি, ইংরেজি, গণিত ও বিজ্ঞান) প্রশিক্ষণ কোর্স(চার সপ্তাহ মেয়াদী আরম্ভ হয় এবং তা চলামন রয়েছে। ২০০২ সালে সর্ব প্রথম শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে বাংলাদেশ মাদসাসা শিক্ষা বোর্ডর অর্থায়নে প্রশিক্ষণ কোর্স চলতে থাকে। ২০০৬ সালে সর্বপ্রথম রাজস্ব বােেজটে বিএমটিটিআই এ প্রশিক্ষণ পরিচালনার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয় এবং প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে। ২০০৩ সালে সরকার মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এর নামের পূর্বে বাংলাদেশ শব্দ যুক্ত করার জন্য আদেশ জারি করে। সেই থেকে এর নাম হয় বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। ২০১২ সেশন থেকে মাদরাসা থেকে যারা ফাজিল পাস করেছেন কিংবা বিএ পাস করেছেন তাদের এক বছর মেয়াদী চাকুরীপূর্ব প্রশিক্ষণ কোর্স তথা “ব্যাচেলর অব মাদরাসা এডুকেশন” (বিএমএড) কোর্স আরম্ভ হয়।
বিএমটিটিআই এর রয়েছে একটি বোর্ড অব গভর্নরস। যার সভাপতি হলেন মাননীয় শিক্ষা সচিব মহোদয়। এর জন্য রাজস্বখাতে ৪৪ জন জনবলসহ মোট ৫৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে।