বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিএমএড কোর্স প্রবর্তন: সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
ড. মোঃ নূরুল্লাহ*
ভূমিকা: পেশাগত উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। এজন্যে বলা হয়, প্রশিক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। মাদরাসা শিক্ষার ইতিহাস অনেক পুরোনো। বিশেষভাবে আলীয়া মাদরাসা শিক্ষা ১৭৮০ সাল থেকে এ উপমহাদেশে চলমান। সে শিক্ষা ধারার আলোকে বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই আলীয়া মাদরাসা শিক্ষা ধারা বিকশিত হয়ে আসছে। বর্তমানে এ শিক্ষাধারায় বিভিন্ন স্তরে দেড় লক্ষাধিক শিক্ষক কর্মরত। স্বতন্ত্র এবতেদায়ী যেগুলো এখনও কোনো অনুদান পায় না সেগুলোর শিক্ষক হিসেব করলে শিক্ষক সংখ্যা প্রায় তিন লাখে উন্নীত হবে। এত প্রাচীন একটি শিক্ষাধারার শিক্ষকগণের অধিকাংশ এখনও প্রশিক্ষণ ধেকে বঞ্চিত। এ ক্ষেত্রে এখনও সীমাবদ্ধতার কমতি নেই। প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী যুগ যুগ ধরে চলে আসলেও তার বাস্তবায়ন খুবই নগণ্য। এখন যতটুকু চলছে তার পেছনেও রয়েছে কতিপয় ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের নিরলস প্রচেষ্টা। যাদের ঋণ শোধ করার নয়। হয়তো একদিন তাদের নামও কেউ স্মরণ করবে না। কিন্তু এমনটি না হওয়াই উচিৎ। তাই মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজনের যে ইতিহাস বাংলাদেশে রচিত হয়েছে তার একটি বিবরণ পাঠকের জন্য তুলে ধরতে এ প্রয়াস।প্রশিক্ষণের দাবী যুগে যুগে : শিক্ষা নিয়ে যারাই কাজ করেন তারা প্রত্যেকে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেন যে, শিক্ষকের মান উন্নয়নের জন্য প্রশিক্ষণ অপরিহার্য। অতএব প্রশিক্ষণ ব্যতিত শিক্ষার মানোন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর থেকেই বাংলাদেশের আলীয়া মাদরাসা শিক্ষা ধারার শিক্ষকদের জন্য সরকারীভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী বিভিন্ন পর্যায়ে থেকে করে আসছিলো বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠন। যেসব সংগঠন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করার জন্য সরকারের কাছে দাবী করে আসছিলো তন্মেধ্যে মরহুম মাওলানা আবদুল মান্নান এর নেতৃত্বে পরিচালিত বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদাররেসীন, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষক পরিষদ, জমিয়তে তালাবা আরাবিয়া, মাদরাসা ছাত্র আন্দোলন পরিষদ ইত্যাদি সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। এ দাবীর প্রেক্ষিতে মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণের সুপারিশ অন্তর্ভুক্ত হতে থাকে বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনে। বিশেষভাবে অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষানীতি-১৯৭৯(জাতীয় শিক্ষা উপদেষ্টা পরিষদের সুপারিশ) , বাংলাদেশ জাতীয় শিক্ষা(মফিজউদ্দিন) কমিশন রিপোর্ট - ১৯৮৮ , মাদরাসা শিক্ষা (ড. এম এ বারী) সংস্কার কমিটি-১৯৮৯ , জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন কমিটি, ১৯৯৭ । ড. এম এ বারী শিক্ষা কমিশনের সুপারিশের আলোকে ১৯৯৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া মোদরাসা শিক্ষকদের চাকুরীপূর্ব ও চাকুরীকালীন প্রশিক্ষণ দানের উদ্দেশ্যে “মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট” এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।বিএমএড প্রবর্তনে বিএমটিটিআই : ১৯৯৬ সাল থেকে জুন-২০০১ সাল পর্যন্ত ছিলো এ ইনস্টিটিউটের প্রকল্পের মেয়াদ। প্রকল্পকালে সর্বপ্রথম ১৯৯৯ সালে তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশে সর্বপ্রথম সরকারী অর্থে মাদরাসার উপাধ্যক্ষ, মুহাদ্দিস ও প্রভাষকদের জন্য দুইমাস মেয়াদী চাকুরীকালীন স্বল্প মেয়াদী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম আরম্ভ হয় এবং ৬টি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ৩৮১ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। প্রকল্প মেয়াদ শেষে বিএমটিটিআই এর প্রশিক্ষণ আর সচল রাখা সম্ভব হয়নি। বিএমটিটিআই চলার মত একটি টাকাও তখন বরাদ্দ নেই। এমতাবস্থায় সরকার মাউশি এর পরিচালক প্রফেসর মোঃ ইব্রাহীম স্যারকে বিএমটিটিআই এর পরিচালক হিসেবে (অতিরিক্ত দায়িত্ব) প্রদান করা হয়। তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পরই বিএমটিটিআই এ কীভাবে বিএড কোর্সের সমমান কোর্স আরম্ভ করা হবে সে ব্যাপারে উদ্যোগ গ্রহণ করেন। একটি কোর্স কারিকুলাম এর খসড়া তৈরি করার জন্য তিনি প্রফেসর মোঃ গোলাম রসূল মিয়া, জনাব মোঃ তমিয উদ্দিন, জনাব মোঃ নূরুল্লাহ এর সমন্বয়ে একটি সাব কমিটি গঠন করেন। কমিটি প্রশিক্ষণের জন্য একটি সিলেবাসও তৈরি করে এবং বিএড কোর্স চালু করার জন্য শিক্ষা সচিব বরাবর আবেদন পত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু তৎকালীন শিক্ষা সচিব জনাব শহীদুল আলম অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে তা নাকচ করেন। কারণ তিনি জানতেন, ফাজিলকে ডিগ্রি সমমান না দেয়া পর্যন্ত ফাজিল পাশদের পক্ষে বিএড ডিগ্রি মানে কোন পোষ্ট গ্রাজুয়েট ডিগ্রি প্রদান সম্ভব নয়। এ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকা অবস্থায় সরকার বিএমটিটিআই এর মাধ্যমে মাদরাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ চালু ও আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমী(নায়েম) এর পরিচালক জনাব মোঃ মাহবুবুর রহমান-কে বিএমটিটিআই এর পরিচালক (অতিঃ দায়িত্ব) প্রদান করে। উল্লেখ্য যে, তখন বিএমটিটিআই এর প্রধানের পদটি পরিচালক হিসেবে ছিলো। পরবর্তীতে তা অধ্যক্ষ করা হয়। জনাব মোঃ মাহবুবুর রহমানকে দায়িত্ব প্রদানের পর তৎকালীন সচিব জনাব শহীদুল আলম বাংলাদেশ মাদরাসা বোর্ডকে প্রশিক্ষণের জন্য বাৎসরিক এককোটি পঁচিশ লাখ টাকা বারাদ্দের জন্য অফিস আদেশ প্রদান করে। জনাব মাহবুবুর রহমান স্যারের সুদক্ষ নেতৃত্বে বিএমটিটিআই অত্যন্ত মুখরিত হয়ে ওঠে। শুরু হয় মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। স্বল্পমেয়াদী চাকুরীকালীন বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কোর্সের অন্যতম হলো দাখিল স্তরের মাদরাসার সহকারী শিক্ষকদের ০৪ সপ্তাহ মেয়াদী বিষয়ভিত্তিক (ব্যবহারিক আরবি ও ইংরেজি, আল-কুরআন. গণিত, বিজ্ঞান, বাংলা ও ইসলামের ইতিহাস), দাখিল, আলিম, ফাজিল ও কামিল মাদরাসা প্রধানদের ০৩ সপ্তাহ মেয়াদী “শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা” বিষয়ক, সিনিয়র মাদরাসা (আলিম, ফাজিল ও কামিল), প্রভাষক/সহকারী অধ্যাপকদের ০৪ সপ্তাহ মেয়াদী বিষয়ভিত্তিক (আরবি, ইংরেজি ও বিজ্ঞান) চাকুরীকালীন প্রশিক্ষণ কোর্স এবং ইবতেদায়ী মাদরাসা প্রধানদের ০২ সপ্তাহ মেয়াদী “শিক্ষা প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনা” বিষয়ক কোর্স।তৎকালীন চারদলীয় সরকার ২০০১ সালে ক্ষমতায় আসার পর প্রথম ১০০ দিনের কর্মসূচির মধ্যে মাদরাসা শিক্ষা সংস্কার নামে ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান এর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করে। সেই কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন জনাব মোঃ মাহবুবুর রহমান। এই কমিটিতে সর্বপ্রথম মাদরাসা শিক্ষকদের জন্য/ফাজিল পাশ শিক্ষার্থীদের জন্য চাকুরীপূর্ব দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের নাম দেয়া হয় বিএমএড বা ব্যাচেলর অব মাদরাসা এডুকেশন, যা বিএড সমমানের ডিগ্রি হবে বলে সুপারিশ করা হয়। কিন্তু এ সুপারিশ আলোর মুখ দেখতে সময় নেয় অনেক বছর। কারণ, ফাজিলকে ডিগ্রি সমমান এবং কামিলকে মাস্টার্স সমমান না দেয়া পর্যন্ত এ ডিগ্রি প্রদান করা সম্ভব হবে না। ২০০৫ সালে টিকিউআই প্রকল্প স্কুল শিক্ষকদের জন্য বিএড কোর্স বাধ্যতামূলক করার উদ্দেশ্যে বিএড ডিগ্রিধারী নয় এমন শিক্ষকদের বিএড কোর্সের আংশিক ৩ মাসের কোর্স করানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। তাদেরকে পরবর্তীতে বাকী নয় মাস কোর্স সম্পন্ন করার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়। তৎকালীন শিক্ষা সচিব মাদরাসার শিক্ষকদের এ ধরনের কোর্সের আওতায় নিয়ে আসার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে টিকিউআই প্রকল্পকে নির্দেশ দেন। এমনকি বিএমএড কোর্স এর একটি কারিকুলাম তৈরি করার জন্য মাদরাসা বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান জনাব মনিরুল ইসলাম এর নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করেন। এ কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন জনাব মোঃ মাহবুবুর রহমান। কমিটির কাজে সার্বিক সহায়তার জন্য আমাকে এ কমিটির একজন সদস্য হিসেবে কো-অপ্ট করা হয়। এ কমিটি বিএমড কারিকুলাম প্রণয়নের জন্য নায়েমের তৎকালীন সহকারী পরিচালক জনাব আবুল কাসেম এর নেতৃত্বে একটি সাব-কমিটি গঠন করে এবং আমাকে সদস্য সচিব করা হয়। চাকুরী জীবনে আমি অনেকটা নবীন। তখনও কারিকুলাম করার অভিজ্ঞতা আমার হয়নি। তবু অত্যন্ত সাহস ও দৃঢ়তার সাথে টিকিউআই কর্তৃক প্রণীত বিএড কারিকুলামকে মডেল হিসেবে সামনে রেখে আমি বিএমএড কারিকুলামের খসড়া প্রস্তুত করি। ২৭২ পৃষ্ঠার কারিকুলামের অধিকাংশ বিএড এর অনুরূপ হলেও মাদরাসার জন্য সম্পূর্ণ নতুন আঙ্গিকে একেবারেই ইউনিক হিসেবে চারটি বিষয়ের কারিকুলাম প্রস্তুত করি। সেগুলো হলো, আল কুরআন শিক্ষণ, আল হাদীস শিক্ষণ, আকাঈদ ও ফিকহ শিক্ষণ এবং আরবি শিক্ষণ। খসড়া প্রণীত এ কারিকুলামটি সাব-কমিটি ও মূল কমিটি সামান্য সংশোধনীসহ অনুমোদন করে। জাতীয় উন্নয়নের জন্য নতুন একটি বিষয় সৃজন করতে পেরে মানসিকভাবে আত্মতৃপ্তি অনুভব করি। উল্লেখ করা যায় যে, এতবড় একটি কাজের আঞ্জাম দেয়া হলেও অদ্যাবধি কমিটির সদস্যবৃন্দ কোন ধরনের অর্থনৈতিক সম্মানী পাননি। কারিকুলমাটি অধ্যক্ষ মোঃ মাহবুবুর রহমান শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেন। ২০০৬ সালে মাদরাসার ফাজিল ডিগ্রিকে বিএ এবং কামিল ডিগ্রিতে এমএ এর মান প্রদান করে। অতঃপর জোট সরকারের পতন ঘটে। বর্তমান মহাজোট সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে। এ সরকারের জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ এ মাদরাসা শিক্ষার ব্যাপারে যতগুলো সুপারিশ করা হয় তার অন্যতম হলো প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে গতিশীল করা। তারই অংশ হিসেবে ২০১১ সালে সরকার বিএমএড এর ইতঃপূর্বে প্রণীত পরিমার্জন ও পরিবর্ধন করার জন্যে সাব-কমিটি গঠন করে। এ কমটির সদস্য সংখ্যা সদস্য সংখ্যা ছিলো ৫ জন। তারা হলেন, জনাব আবদুন নূর চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড, প্রফেসর ড একে এম ইয়াকুব হোসাইন, অধ্যক্ষ, মাদরাসাই আলীয়া ঢাকা, প্রফেসর আনোয়ার হোসেন, পরিদর্শক, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা সাব্বির আহমেদ মোমতাজী, মহাসচিব, বাংলাদেশ জমিয়াতুল মুদাররেসীন ও অধ্যক্ষ মোঃ মাহবুববুর রহমান। এ কমিটির সাথেও আমার কাজ করার সুযোগ হয়। শিক্ষাক্রম পরিমার্জন করে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দাখিল করা হয়। মানীয় শিক্ষা সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের বিএমএড কোর্স জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে চালু করার জন্য সিদ্ধান্ত প্রদান করেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় চিঠি প্রেরণ করে। বিএমএড চালু করার জন্য মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগের কাজটি অধ্যক্ষ মহোদয়ের সাথে আমারও আঞ্জাম দেয়ার সুযোগ হয়। ২০১২ সালের মার্চ মাস। বিএমটিটিআই এর অধ্যক্ষ হিসেবে ইতোমধ্যে প্রফেসর মোঃ আবদুল মালেক যোগদান করেছেন। তিনি অধ্যক্ষ মোঃ মাহবুবুর রহমান স্যারের বিএমএড চালুকরণের বিষয়ে কাজটি যতদুর এগিয়েছিলো তা আরো বেগবান করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিজস্ব আঙ্গিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রণীত ও পরিমার্জিত শিক্ষাক্রমটি পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করে। সে কমিটিতেও সৌভাগ্যক্রমে আমার সদস্য হিসেবে অংশগ্রহণের সুযোগ হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাক্রমটি অনুমোদন করলে ২০১২ সালেই বিএম কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির অনুমতি চেয়ে অধ্যক্ষ আবদুল মালেক স্যার ভিসি বরাবর পত্র প্রেরণ করেন। কিন্তু তৎকালীন ভিসি মহোদয় সেশনের চারমাস অতিবাহিত হয়ে যাওয়ায় পরবর্তী সেশন থেকে চালু করার জন্য মতামত দেন। বিষয়টি অধ্যক্ষ আবদুল মালেক স্যার জানতে পেরে অত্যন্ত ব্যাথিত হন। তিনি অত্যন্ত পেরেশানী মন নিয়ে আল্লাহর নিকট দোআ করেন এবং পরের দিন বিষয়টি নিয়ে ঢাকা আলীয়া মাদরাসায় মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী জনাব নূরুল ইসলাম নাহিদের সাথে দেখা করেন এবং বিএমড চালু করার গুরুত্ব তুলে ধরেন। তিনি মন্ত্রী মহোদয়কে এ মর্মে আস্বস্থ করেন যে, সেশনের যে চারমাস অতিবাহিত হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে তিনি বিশেষ ক্লাসের ব্যবস্থা করবেন। মন্ত্রী মহোদয় তার কথায় গুরুত্বারোপ করেন এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয়কে ২০১২ সালেই বিএমএড কোর্সে ভর্তির সুযোগদানের জন্য মৌখিক নির্দেশ দেন। ৭৫টি সীটের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি নতুন ডিগ্রি সংযোজন হয় যার নাম বিএমএড বা ব্যাচেলর অব মাদরাসা এডুকেশন। এ নামে সম্ভবত বিশ্বে আর কোন ডিগ্রি নেই বলে আমার ধারণা। বিএমটিটিআই এর মাধ্যমে ইতোমধ্যে দুটো কোর্স সমাপ্ত হয়েছে এবং তৃতীয় কোর্সটি চলমান রয়েছে।বিএমএড কোর্স এ দেশের মাদরাসা শিক্ষা জগতে তথা দেশের উন্নয়নে একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে আমি মনে করি। এ কোর্স প্রবর্তনে যেসব ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকার কাজ করেছেন আল্লাহ তাদের উত্তম পুরুস্কার দান করুন।